ক্রিস ব্রাউন


ক্রিস্টোফার মরিস ব্রাউন ( ইংরেজী : Christopher Maurice Brown), জন্ম ০৫ মে ১৯৮৯ সাল। একজন আমেরিকান গায়ক, গীতিকার, নৃত্যকার এবং অভিনেতা । বিলবোর্ড অনুসারে ক্রিস আফ্রো-আমেরিকান হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বকালের সবচেয়ে সফল "আর অ্যান্ড বি"  গায়ক । তার সঙ্গীতের ধারা পলিহেড্রিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত । তার আর অ্যান্ড বি ঘরনা বেশ কয়েকটি অন্য ঘরনার সঙ্গীত দ্বারা প্রভাবিত, প্রধানত হিপ-হপ এবং পপ সঙ্গীত। তিনি আর. কেল্লি এবং আশার এর সাথে সম্মানজনক কিং অব "আর অ্যান্ড বি খেতাব পেয়েছেন।  


ক্রিস যুক্তরাষ্টের ভার্জিনিয়ার ট্যাপাহানকে জন্মগ্রহন করেন । শৈশবে তিনি তার স্থানীয় গীর্জার গায়ক দলের সাথে এবং বিভিন্ন ট্যালেন্ট শো-তে জড়িত ছিলেন । তিনি ২০০৪ সালে জাইভ রেকর্ডস-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং ওই বছরে নিজের নামে তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ পায় । তার প্রথম অ্যালবামটি রেকডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা দ্বারা ট্রিপল প্লাটিনামে স্বীকৃত হয় । তার প্রথম সিঙ্গেল "রান ইট"  বিলবোর্ড হট ১০০ তে শীর্ষ স্থান দখল করে । ১৯৯৫ সালের পরে তিনিই প্রথম গায়ক যার প্রথম সিঙ্গেল শীর্ষ স্থানে ওঠে। 


তার দ্বিতীয় অ্যালবাম এক্সক্লুসিভ এর গান "কিস কিস"  তার দ্বিতীয় বিলবোর্ড হট ১০০ নাম্বার ওয়ান স্থান দখল করে। তার তৃতীয় অ্যালবাম সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় । কিন্তু তার চতুর্থ অ্যালবাম সবচেয়ে বেশি সফলতা অর্জন করে এবং এই অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি প্রথম বারের মত গ্রামি পুরস্কার অর্জন করেন। 


তিনি বিশ্বব্যাপী ১৪০ মিলিয়ন রেকর্ডস বিক্রি করেছেন । তিনি সবচেয়ে বেশি রেকর্ডস বিক্রেতাদের মধ্য অন্যতম । তিনি কয়েকটি পুরস্কার জিতেছেন তার মধ্য গ্রামি পুরস্কার, বিলবোর্ড মিউজিক পুরস্কার, সোউল ট্রেইন পুরস্কার । তিনি সপ্তম গায়ক যার গান সবচেয়ে বেশি বিলবোর্ডে এন্ট্রি করেছে । তিনি অভিনয়েও ক্যারিয়ার গড়েন । দিস ক্রিসমাস (২০০৭), টেকারস্ (২০১০), থিংক লাইক অ্যা ম্যান (২০১২) এর মত সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন।  


ক্রিস ব্রাউন


প্রাথমিক জীবন

ক্রিস ব্রাউন ০৫ মে ১৯৮৯ সালে ছোট শহর ট্যাপাহানকে জন্মগ্রহল করেন । তার পিতা ক্লিনটন ব্রাউন যিনি একজন স্থানীয় জেলের কারেকশনস্ অফিসার । তার মা জয়েসি হকিংস যিনি একজন সাবেক ডে কেয়ার সেন্টার ডিরেক্টার । তার একটি বড় বোন আছেন যিনি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন । শৈশব থেকেই ক্রিসের মাঝে সঙ্গীতের উপস্থিতি ছিল । তিনি তার পিতা-মাতার সোউল অ্যালবাম শুনতেন এবং অবশেষে হিপ-হপে আগ্রহ প্রকাশ করেন। 


তিনি ছোটবেলা থেকে সঙ্গীত এবং নাচে পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং তিনি মাইকেল জ্যাকসনকে তার আদর্শ মানেন । তিনি স্থানীয় চার্চের সঙ্গীত দল এবং ট্যালেন্ট শো-তে জড়িত ছিলেন । যখন তিনি আশারের মাই ওয়ে গানে পারফর্মেন্স করলেন তখন তার মা তার প্রতিভা বুঝতে পারলেন এবং তাকে একটি রেকর্ড কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ করালেন। 


ক্যারিয়ার

ক্রিস ব্রাউন ২০০৪ সালে জাইভ রেকর্ডস-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। সে বছর তিনি নিজের নামে তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেন। অ্যালবামটি আরআইএএ দ্বারা ট্রিপল প্লাটিনামে স্বীকৃত হয় । তার অভিষিক্ত সিঙ্গেল "রান ইট" বিলবোর্ড হট ১০০তে শীর্ষ স্থান দখল করে। যা ১৯৯৫ সালের পর কোনো গায়ক এই কীর্তি অর্জন করেন। তাছাড়া "ইয়ো ( এক্সকুজ মি মিস )", "গিমমি দ্যাট", "সেই গুড বাই" গানগুলো বিলবোর্ড হট ১০০ এর টপ ২০ এ জায়গা করে নেয়। অ্যালবামটি বিশ্বব্যাপী ৬ মিলিয়ন কপি বিক্রি করে। 


ক্রিস ব্রাউন ২০০৭ সালে তার দ্বিতীয় অ্যালবাম ''এক্সক্লুসিভ" প্রকাশ করেন । এই অ্যালবামের "কিস কিস" গানটি বিলবোর্ড হট ১০০তে শীর্ষ স্থান দখল করে। গানটিতে ফিচার করেছিলেন টি-পেইন । গানটি যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী প্রচুর সাড়া ফেলেছিল । বর্তমানেও গানটি তুমুল জনপ্রিয় । অ্যালবামের অন্য আরেকটি গান "উইদ ইউ" যেটি কিস কিস এর থেকে আরও বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং সর্বকালের সেরা বিক্রিত গানের মধ্যে একটি হয়ে যায় ।  অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০ এ নাম্বার ৪ এ অভিষেক করে । অ্যালবামটি যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী ১.৯ মিলিয়ন কপি বিক্রি করে।


তার তৃতীয় অ্যালবাম ''গ্রাফিটি" । যেটি ২০০৯ সালে মুক্তি পায় । যদিও অ্যালবামটি তার ব্যক্তিগত কারণে সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় । অ্যালবামের "আই ক্যান ট্রান্সফরম ইয়া" গানটি বিলবোর্ড হট ১০০ তে ২০ নম্বর পজিশনে অভিষেক করে । অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০ চার্টে ৭ নম্বরে ডেবিউ করে । যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী অ্যালবামটি ৩৪১,০০০ কপি বিক্রি করে।

 

কিন্তু তার চতুর্থ অ্যালবাম ''ফেইম'' যেটি তিনি ২০১১ সালে মুক্তি দেন সেটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলে । এই অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি অর্জন করেন তার প্রথম গ্রামি অ্যাওয়ার্ড । এই অ্যালবামের ''ইয়াহ ৩x'', ''লুক অ্যাট মি নাও'' গানগুলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করে । ''ইয়াহ ৩x'' গানটি তিনি এক ধরনের গান হিসেবে উপস্থাপন করেন । গানটি ১১টি দেশের টপ টেনে জায়গা করে নেয় । ''লুক অ্যাট মি নাও'' গানটিতে ফিচার করেছিলেন লিল ওয়েইন, বুস্টা রাইমস । গানটি সে বছর সবচেয়ে বিক্রিত র্যাপ  গান এবং যুকিতরাষ্ট্রের সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত সিঙ্গেলের একটি । ফেইম অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০ চার্টে নম্বর ১ এ অভিষেক করে । যা ক্রিসের দ্বিতীয় । অ্যালবামটি প্রথম সপ্তাহে ২৭০,০০০ কপি বিক্রি করে । অ্যালনামের ''বিউটিফুল পিপল'', ''নেক্সট টু ইউ'', ''শী এইন্ট ইউ'' গানগুলোও বিশ্বব্যাপী সফলতা অর্জন করে । অ্যালবামটি ক্রিস ব্রাউনের অন্যতম একটি আইকনিক প্রজেক্ট । অ্যালবামটির প্রচারনার জন্য ক্রিস অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় ট্যুর করেন । এই অ্যালবামের জন্য ক্রিস বেট অ্যাওয়ার্ডে ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পান এবং পাঁচটিতে জয়ী হন । ৫৪ তম গ্রামি অ্যাওয়ার্ডে সেরা আর অ্যান্ড বি অ্যালবাম বিভাগে ফেইম বিজয়ী হয় । এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ক্রিস প্রথমবারের মত কয়েকটি গানে পারফর্মেন্স করেন।


ক্রিস ব্রাউনের পঞ্চম স্টুডিও অ্যালবাম ''ফরচুন" । ২০১২ সালের ০৩ জুলাই এটি মুক্তি পায়। অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০ চার্টে শীর্ষে অভিষেক করলেও সমালোচকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি । অ্যালবামের ''টার্ন আপ দ্য মিউজিক", ''ডোন্ট ওয়েক মি আপ", ''ডোন্ট জাজ মি" গানগুলো বাজ ক্রিয়েট করে । ক্রিস ব্রাউন অ্যালবামটির প্রচারনার জন্য ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও ত্রিনিদাদে কার্পে ডিয়েম ট্যুর করেন। 


"X" ক্রিস ব্রাউনের ষষ্ঠ স্টুডিও অ্যালবাম যেটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পায় । অ্যালবামের "লয়াল" গানটি বিলবোর্ড হট ১০০ তে নম্বর ৯ এ স্থান দখল করে । তাছাড়া "নিউ ফ্লেইম" গানটিও সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয় । "ফাইন চায়না", "লাভ মোর" , "ডোন্ট থিংক দেই নো" গানগুলোও অ্যালবামের অন্যতম জনপ্রিয় গান । অ্যালবামটি সমালোচকদের থেকে ইতিবাচক রিভিউ পায় । ২০১৫ গ্রামি অ্যাওয়ার্ডে অ্যালবামটি "সেরা আরবান কনটেম্পোরারি" অ্যালবামের জন্য এবং "নিউ ফ্লেইম" গানটি সেরা র্যাপ পারফর্মন্সের জন্য মনোনিত হয় । ব্যবসায়িকভাবে অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০ চার্টে দ্বিতীয় স্থানে অভিষেক করে । প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালবামটি ১৪৬,০০০ কপি সহ সর্বমোট ৪০৪,০০০ কপি বিক্রি করে । এটি "আরআইএএ" দ্বারা প্লাটিনামে স্বীকৃত হয়। 


২০১৫ সালে ক্রিস ব্রাউন টায়গার সাথে "ফ্যান অব ফ্যান" নামে একটি কলাব্রেট অ্যালবাম প্রকাশ করেন । ঐ বছর ক্রিস ব্রাউন একটি কন্যা সন্তানের জনক হন। তার কন্যা রয়াল্টি ব্রাউনকে সম্মান জানানোর জন্য ঐ বছর তিনি তার কন্যার নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন। অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০ চার্টে তৃতীয় স্থানে দখল করে । অ্যালবামটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সপ্তাহে ১৮৪,০০০ ইউনিটস বিক্রি করে। 


"হার্টব্রেইক অন এ ফুল মুন" নামে ২০১৭ সালে ক্রিস ব্রাউন তার অষ্টম স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেন । অ্যালবামের দ্বিতীয় গান "পার্টি" যেটিতে ফিচার করেছেন আশার এবং গুচ্চি মানে । গানটি বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। অ্যালবামটির অন্য গান যেমন প্রাইভেসি, পিলস্ অ্যান্ড অটোমোবাইল, কোয়েশ্চনস সর্বব্যাপী সফলতা অর্জন করে । অ্যালবামটি মুক্তির এক সপ্তাহ পর এটি আরআইএএ দ্বারা গোল্ডে স্বীকৃত হয় । যা  ২০০৪ সালের পর কোনো গায়ক এটি অর্জন করেন। অ্যালবামটি প্রথম সপ্তাহে ৫০০,০০০ ইউনিটস্ বিক্রি করে।


২০১৯ সালে ক্রিস তার নবম অ্যালবাম ইন্ডিগো প্রকাশ করেন । অ্যালবামটিতে ফিচার করেছেন নিকি মিনাজ, টায়গা, জাস্টিন বিবার, হার, জয়নার লুকাস, লিল ওয়েইন, গুন্না এবং ড্রেইকের মত গায়কেরা । অ্যালবামের নো গায়ডেন্স গানটি বিলবোর্ড হট ১০০ তে নম্বর ৫ এ স্থান দখল করে । গানটিতে ফিচার করেছেন কানাডিয়ান র্যারাপ ড্রেইক । গানটি কয়েকটি অ্যাওয়ার্ডে মনোনিত হয় এবং পুরস্কার লাভ করে । ১০৮,০০০ ইউনিটস্ প্রথম সপ্তাহে বিক্রি করে অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০ চার্টে নম্বর ১ এ অভিষেক করে । যা ক্রিসের তৃতীয় নম্বর ১ অ্যালবাম । অ্যালবামটির প্রচারনার জন্য ক্রিস আমেরিকায় একটি ট্যুর করেন। 


ব্যক্তিগত জীবন

ক্রিস ব্রাউন বার্বাডিয়ান গায়িকা রিয়ানার সাথে ২০০৭ সাল থেকে তাদের মধ্য ঘটে যাওয়া সহিংসতা পর্যন্ত একটি সম্পর্কে জড়িত ছিলেন । এরপর ২০১১ সালে ক্রিস উচ্চাকাঙ্ক্ষী মডেল কারুচি ট্রান এর সাথে ডেটিং শুরু করেন করেন । ২০১২ সালে ক্রিস ঘোষণা করেন ট্রানের সাথে সে ব্রেক আপ করেছে কারণ রিয়ানা তার জীবনে আবার ফিরে এসেছে । জানুয়ারি ২০১৩তে রিয়ানা নিশ্চত করেন সে এবং ক্রিস তাদের রোমান্টিক সম্পর্ক আবার শুরু করেছে । ২০১৩ সালের মে মাসে এক ইন্টারভ্যুতে ক্রিস বলেন তার সাথে রিয়ানার আবার ব্রেইক আপ হয়ে গিয়েছে । ক্রিস পরবর্তীতে ট্রানের সাথে পুনরায় মিলিত হয় কিন্তু তারা আবার আলাদা হয়ে যায় যখন ট্রান জানতে পারে ক্রিসের একটি কন্যা আছে নিয়া গুজম্যানের সাথে । ট্রান ক্রিসের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন । যাতে ক্রিস তার কাছে না আসতে পারে। নভেম্বর ২০১৯ ক্রিস এইকো কাটোরি ব্রাউন নামে এক পুত্র সন্তানের জনক হন । এইকোর মায়ের নাম অ্যামিকা হ্যারিস । 


ডিস্কোগ্রাফি:

অ্যালবামমুক্তি
ক্রিস ব্রাউন২০০৫
এক্সক্লুসিভ২০০৭
গ্রাফিটি২০০৯
                           ফেইম                      ২০১১
                           ফরচুন                      ২০১২
                                 X                      ২০১৪
                            রয়াল্টি                      ২০১৫
            হার্টব্রেইক অন এ ফুল মুন                      ২০১৭
                             ইন্ডিগো                      ২০১৯
                              ব্রীজি                  ২০২২ (সম্ভাব্য)



 









    


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন